
ছবি : রণদেব মুখোপাধ্যায়
জনপদের নাম গোয়াই , কি করে যে এই নাম তার কিন্ত অনেক রকমের মত আছে। নদী তীরবর্তী এই জায়গাতেই ইংরেজ সাহেবরা অষ্টাদশ শতাব্দীর আটের দশক থেকেই নীল চাষ শুরু করেছিল । শুধু যে গোয়াই য়ে নীল চাষ করা হত তা কিন্ত নয় কেতুগ্রামের গঙ্গা তীরবর্তী শাঁকাই, মঙ্গলকোটের খেঁড়ুয়া , কাটোয়ার বিজনগর গ্রামেও নীল চাষ করা হত। তখন এইসব এলাকায় গোরা সাহেবদের অত্যাচারে গ্রামের চাষিরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। ধানের পরিবর্তে নীল চাষ করার ফরমান ছিল সাহেবদের । স্বাধীনতার পর এই সব এলাকার চাষিরা লাঙল ঠেলে চাষ করতে গেলে প্রায়ই মাটির নীচ থেকে শঙ্কর মাছের শিরদাঁড়া দিয়ে বানানো চাবুকের অংশ , হাড়গোড় , নরকঙ্কাল দেখতে পেত । গোয়াই, বিজনগর গ্রামের বাসিন্দাদের বুঝতে অসুবিধা হত না এগুলো কি? কারণ জমির পাশেই তো গোরা সাহেবদের নীলকুঠী, এস্কিমোদের “ইগলু”র আদলে তৈরি নীলের গুদাম,নীলের চৌবাচ্চার চিমনি, হাপর সবই ধ্বংস হতে হতে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে। নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও নীলচাষের কাহিনি এখন তো গল্পকথা । নীল ভেজানো চৌবাচ্চা থাকতো তামা আর লোহার পাতে মোড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা কবেই সে সব খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

ছবি : রণদেব মুখোপাধ্যায়
মূলত ১৭৭৭ সালে লুইস বোনার্ড এর হাত ধরে ভারতে নীল চাষ শুরু হয়। যদিও এর পর ১৭৮৯ সালের ২৯ অক্টোবর গুয়েতেমালার নীল নিয়ে এসে বাংলাদেশে নীল চাষ শুরু করা হয়। কাটোয়া এলাকায় ভাগীরথী ও অজয় নদ থাকার ফলে উৎপাদিত নীল সহজে জাহাজে করে পরিবহণ করা যেত বলে শাঁকাই, গোয়াই, বিজনগর , খেঁড়ুয়া নীলকুঠী ছিল সাহেবদের প্রধান ঘাঁটি ছিল। প্রথম নীলকুঠী তৈরি হয় বর্ধমানের শাঁকাই গ্রামের পাশে বজরাডাঙ্গায়, পরে বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদেও নীল চাষ শুরু হয়। ১৮৫৮ সালে শুরু হয় নীলচাষিদের বিদ্রোহ, নদিয়ার বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস নীল চাষিদের একত্রিত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। পরে পাবনার কাদের মোল্লা, নারাইলের রামরতন মল্লিক এবং খুলনার বেশ কিছু কৃষক এই বিদ্রোহে যোগ দেয় । সে সময় ১৮৬০ সালে দীনবন্ধ মিত্রের লেখা “নীলদর্পন ” নাটক এই বাংলায় মঞ্চস্থ হয় । ইংরেজদের সেই অহংকারের হাপর, চিমনি, নীল গুদাম সবই এখন ইতিহাসের চিহ্ন নিয়ে একাকী দাঁড়িয়ে আছে ।

ছবি : রণদেব মুখোপাধ্যায়
গোয়াই গ্রামের বাসিন্দারা এখন নীলকুঠীর দেওয়ালে ঘুঁটে দেয়। অত্যচারী ইংরেজ সাহেবদের জারি করা নির্দেশ ধান চাষের পরিবর্তে নীলচাষ করার অমান্য করলেই জুটতো মার । সেই দাম্ভিক সাহেবদের পতনে আর যাই হোক বাঙালি অনেক আনন্দ পেয়েছিল আর এখন নীলকুঠীর ধ্বংস স্তূপ সেই অত্যাচারের সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।

ছবি : রণদেব মুখোপাধ্যায়
□ কিভাবে যাবেন গোয়াই?
বাস বা ট্রেন ধরে কাটোয়া শহরে পৌঁছে যান। কাটোয়া কলেজ থেকে টোটো বা রিক্সা নিয়ে অজয়ের বাঁধের কাছেই গোয়াই , পাঁচ মিনিটের পথ ।
□ লেখক : রণদেব মুখোপাধ্যায় □ ছবি : রণদেব মুখোপাধ্যায় □ লেখা ও ছবি পাঠানোর ঠিকানা : □ ইমেইল : [email protected]
1 কমেন্ট
বাহ! খুব সুন্দর পোস্ট